Logo

সাহিত্য সংস্কৃতি    >>   সংগীত পরিষদ নিউইয়র্কের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও কিংবদন্তি দুই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য

সংগীত পরিষদ নিউইয়র্কের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও কিংবদন্তি দুই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য

সংগীত পরিষদ নিউইয়র্কের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও কিংবদন্তি দুই শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য

প্রজ্ঞা নিউজ:
নিউইয়র্কের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত পরিষদ গত ৩০ মার্চ ২০২৫, রবিবার নিউইয়র্কের জ‍্যাকসন হাইটস , সংগঠনের নিজস্ব মিলনায়তনে এক অনন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এবং সংগীত ও সংস্কৃতি জগতের দুই কিংবদন্তি— সনজিদা খাতুন ও সুষমা দাস-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পুষ্পিতা রায় প্রয়াত দুই গুণীজনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান। এরপর সূচনা হয় মূল অনুষ্ঠানের, যেখানে বক্তারা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের তাৎপর্য ও তাঁদের স্মৃতিচারণ করেন ।


বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন সংগীত পরিষদের শিশু শিক্ষার্থী ঈশাণ চক্রবর্তী এবং বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক সুব্রত তালুকদার। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ও আগামী প্রজন্মের দায়িত্ববোধ।
সনজিদা খাতুন ও সুষমা দাসকে স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণ করেন ড. সুচরিত দত্ত ও সংগীতশিল্পী পারমিতা দাশ মুমু। এছাড়া, পুষ্পিতা রায় প্রয়াত সংগীতশিল্পী সুষমা দাস-এর জীবনী পাঠ করেন এবং এক মনোমুগ্ধকর আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
এছাড়া স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে সংগীত পরিষদের শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন, যা দর্শকদের আবেগে ভাসায়। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা ছিলেন—
স্বপ্নীল তালুকদার, অনন্যা বড়ুয়া, আনুশা চৌধুরী, রুদ্রিতা বড়ুয়া, সূতীব্র বড়ুয়া, সাত্যকি মৈত্র, সুদীপ্তা ধর, নবনীতা দেবনাথ পায়েল, দেবযানী মজুমদার ও ক্রিস্টেলা কুইয়া।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন বাংলা সংগীতকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা সংগীত পরিচালক মহিতোষ তালুকদার তাপস। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মাত্র একটি ফোন কলেই আমন্ত্রিত হয়ে তিনি সময়মতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তাঁর উপস্থিতিতে দর্শকদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে, তাঁকে স্বাগত জানিয়ে করতালিতে মুখরিত হয় পুরো অনুষ্ঠানস্থল।

তাঁর বিনয়ী ব্যবহার, শ্রদ্ধাশীল মনোভাব এবং বাংলা সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি শুধু একজন সংগীত পরিচালক নন, বরং এক সাংস্কৃতিক দূত, যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও আমেরিকার শিল্পীদের একত্রিত করে বাংলা সংগীতকে নতুন মাত্রা দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করে চলেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শিল্পী হিসেবে মনোমুগ্ধকর কিছু দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন—
ফুলু রায় চৌধুরী, কৃষ্ণা সরকার ও বাপ্পী সোম। তাঁদের গাওয়া গানগুলো উপস্থিত দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।


অনুষ্ঠানকে সফল করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন
নিরঞ্জন দাস, মিতা বড়ুয়া, স্বাগতা মৈত্র, সুব্রত তালুকদার, রুম্পা বড়ুয়া, শম্পা রায়, মুনমুন বড়ুয়া, মিতু চক্রবর্তী, রিমকু দাশ, শারমীন ঝুমা, উজ্জ্বল ধর ও জাহেদ শরীফ।
এছাড়াও, প্রজ্ঞা পত্রিকার সম্পাদক উত্তম সাহা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটির মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সংগীত পরিচালক মহিতোষ তালুকদার তাপস সনজিদা খাতুনের স্মৃতিচারণ করেন এবং তাঁর সঞ্চালনায় এক আবেগঘন দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশিত হয়।
এরপর উপস্থিত সকলের জন্য চা, কফি, পিৎজা ও বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়, যা পুরো অনুষ্ঠানের এক আনন্দঘন সমাপ্তি টেনে দেয়।


এছাড়াও অনুষ্ঠানে, •    তবলা সহযোগিতা: ড. সুচরিত দত্ত,
•    অনুষ্ঠান সঞ্চালনা: পুষ্পিতা রায়,
•    ভিডিও ধারণ: ডা. দীপালোক বনিক,
•    ফটোগ্রাফি: সাংবাদিক উত্তম সাহা,
•    ব্যানার ডিজাইন: মানস দাসগুপ্ত মিঠু,
•    সমাপনী সহযোগিতা: ক্রিস্টেলা কুইয়া, দেবযানী মজুমদার, মুনমুন বড়ুয়া ও রুমানা রুমি,
•    সার্বিক তত্ত্বাবধানে: সংগীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি কাবেরী দাশ ।
সংগীত পরিষদ নিউইয়র্কের এই আয়োজন শুধু স্বাধীনতা দিবস উদযাপন নয়, বরং সংগীত ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁদের গভীর দায়বদ্ধতার এক অনন্য উদাহরণ। পাশাপাশি, কিংবদন্তি দুই শিল্পীর প্রতি তাঁদের এই শ্রদ্ধার্ঘ্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহন করার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে থাকবে।
এই আয়োজন প্রমাণ করে যে, সংগীত শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি ঐতিহ্য, ইতিহাস ও চেতনার প্রতিচ্ছবি, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। নিউইয়র্কের প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা হয়ে থাকবে।